Sunday, October 16, 2016

কলা খেলে রাগ কমে !

dtl image
বাংলা ভাষায় কলা এমন একটি শব্দ যার আগে পিছে কিছু যোগ করলে প্রথমত কলার মান-সম্মান হারায়, দ্বিতীয়ত যার জন্য যোগ করা হয় তার সম্মান যায়। যেমন, একজন অন্যজনকে বললো কলা খাও; তাতে অন্যজন রেগেও যেতে পারেন। কেননা ব্যাপারটা কলা খাওয়ার প্রস্তাবে না, অসম্মানের জায়গা থেকে।
সহজপ্রাপ্য এই ফলটির সাহিত্যিক অলংকার হিসেবে উল্লেখ ছিলো চর্যাপদে। তাছাড়া খনার  ‘…কলা রুয়ে না কেটো পাত/ তাতেই কাপড় তাতেই ভাত” কিংবা ‘নলেকান্তর গজেক ছাই/কলা রুয়ে খেও ভাই’ এই প্রাচীন কথাগুলোতেও কলাকে বেশ লক্ষ্মী হিসেবেই গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। রবি ঠাকুরও কলা নিয়ে লিখেছিলেন ‘আমসত্ব দুধে ফেলি / তাহাতে কদলি দলি/ সন্দেশ মাখাইয়া তাতে…’ ছড়াটি।
পাকা কলার গুণ
 
কলার মতো গুণী ফল বা খাবার খুবই কম। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় প্রতিদিনের রুটিনে কলা রাখা যায়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, অনেকের ধারণা কলা খেলে মানুষ মোটা হয়ে যায় বা ডায়াবেটিসের সমস্যা দেখা দেয়, এগুলো ঠিক নয়। কলা খেলে শরীররে তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। প্রতিদিন অন্তত একটি করে কলা  শরীরে কি কি উপকার করে তা  দেখুন।
১.মেদ ঝরায় : কলায় রয়েছে ভিটামিন বি যা পেটে ফ্যাট জমতে  দেয় না। এ দেহের অন্য জায়গাতেও জমে থাকা মেদ  কমাতে সাহায্য করে। 
২. ডায়বেটিসের সঙ্গে যুদ্ধ করে : খাবারে থাকা চিনি ও শর্করা উপাদানকে কলা শুষে নয়ে। ফলে তা রক্তে মিশতে পারে না। এছাড়া এতে থাকা প্রোটিন ও ফ্যাট ডায়বেটিস রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৩.  পেট ফোলা ও গ্যাস দূর করে : কলায় থাকা পটাশিয়াম শরীরে অতিরিক্ত পানি বের করে  দেয়। কলা খেলে অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়া তৈরি হয় যা গ্যাস জমতে দেয় না। যে কারণে পেট ফোলা কম থাকে। পেটে গ্যাস জনিত সমস্যা থাকলে রোজ ১-২টি করে কলা খেলে উপকার পাবেন।
৪. হাড় শক্ত করে :  কলায় থাকা ক্যালশয়িাম হাড়কে মজবুত করে ও হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
৫. মাংসপেশী গঠন করে :  কলায় রয়েছে ম্যাগনেশিয়াম যা খুব দ্রুত মাংসপশেীর গঠন বিশেষ সাহায্য করে।
৬. ব্যথা দূর করে : নানান কাজের পরে শরীরে অনেক সময় ব্যথা হয়। কলা খেলে তা অনেক খানি দূর হয়ে যায়। কলায় থাকা পটাশিয়াম ব্যথা সারাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৭. রাগ প্রশমন করে : আপনি যদি অল্পতেই  রেগে যান ও বিরক্ত হন তাহলে তা কমাতে রোজকার খাবারে কলা রাখুন। কলায় নোরপাইনফ্রিন নামক  উপাদানটি আপনার রাগ প্রশমনে বিশেষ সহায়তা করে।
৮. ঘুম ভালো হয় : কলা খেলে অনিদ্রা হয়। কলার  ‘টাইপ্টোফ্যান’ নামক অ্যামিনো অ্যাসিড ঘুমোতে সাহায্য করে।
৯.কোলস্টেরেল কমায় : শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টরোল কমাতে কলা বিশেষভাবে সাহায্য করে। এতে হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
 
পাকা কলার খোসার গুণ
কলা শুধু শরীরকে ফিট থাকতে সাহায্য করে না, এটি মানুষকে সুন্দর রাখতেও বড় ভূমিকা পালন করে। কিন্তু কলার পুষ্টিগুণ ছাড়াও  খোসার রয়েছে কিছু অসাধারন গুণ। জেনে নিন পাকা এবং কাঁচা কলার খোসার অভিনব কিছু ব্যবহার।
১. খাবার হিসেবে কাঁচা কলার খোসার ওপরের আঁশ  ফেলে দিয়ে কুচি করে নিন। এরপর এটা ভাঁপিয়ে নিন। এর সাথে শুকনো মরিচ ভাজা, পেঁয়াজ, রসুন ও সরিষার তেল দিয়ে বেটে নিন। চমৎকার র্ভতা হয়্ব যাবে। চাইলে এর সাথে ছোট চিংড়ি মাছও দিতে পারেন।
২. ছোট ছোট ব্রণকে তাৎক্ষণিকভাবে দূর করতে সাহায্য করবে কলার খোসা। কলার খোসার  ভেতরের অংশটি দিয়ে ব্রণের ওপর ঘষতে থাকুন । কিছুক্ষণ পর  দেখবেন ব্রণ মিলিয়ে গেছে।
৩. এই হলদেটে দাঁত সাদা করতে কলার খোসার ভেতরের দিকটা দাঁতে ঘষতে থাকুন ২ মিনিট ধরে। এরপর ৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর আপনার নিয়মিত টুথপেস্ট দিয়ে দাঁত মেজে ফেলুন। মাত্র ৭ দিনেই দাঁত হয়ে উঠবে ঝকঝকে সাদা।
৪. মশা বা পোকামাকড়ের কামড়ের ফলে ত্বকে চুলকানি হয়। এই জ্বলুনি বা চুলকানি থেকে তাৎক্ষণিক রক্ষা পেতে চাইলে কলার খোসার ভেতরের দিকটা আক্রান্ত স্থানে ঘষলে চুলকানি কমে যাবে।
৫. এবার পাকা কলার খোসার ভেতরের অংশটা দিয়ে জুতার উপরে  ৫ মিনিট ঘষে নিন। এরপর একটি পাতলা পরিস্কার কাপড় দিয়ে জুতা জোড়া ভালো করে মুছে নিন। জুতা চকচকে দেখাবে।
৬. কলার খোসার ভেতরের অংশটি দিয়ে সিডি বা ডিভিডিতে ভালো করে ঘষে নিলে সিডি বা ডিভিডিতে স্ক্র্যাচ থাকবেনা।  সিডি বা ডিভিডিও চলবে আগের মতোই।
৭. কলার খোসার ভেতরের অংশ আঁচিলের উপর রাখুন। নিয়মিত ব্যবহারে আঁচিল শুকিয়ে পড়ে যাবে।
এবার কাঁচা কলার গুণ
 
পাকা কলার মতো কাঁচা কলাতেও রয়েছে বিভিন্ন পুষ্টিগুণ। ভর্তা, তরকারি অথবা বড়া বানিয়ে খাওয়া যায় কাঁচা কলা। কাঁচা কলায় রয়েছে পটাশিয়াম, যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ও র্কমক্ষম থাকতে সাহায্য করে। এছাড়া ভিটামিন -বি৬ ও ভিটামিন-সি পুষ্টি যোগায় শরীরে।
জেনে নিন কাঁচা কলার গুণাগুণ সম্পর্কে
১. প্রতিদিন নিয়মিত কাঁচা কলা খেলে ওজন কমে যায়। কাঁচা কলায় রয়েছে প্রচুর আঁশ জাতীয় উপাদান যা অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
২. কাঁচা কলা ডায়বেটিস প্রতিরোধে সহায়তা করে।
৩.শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. কাঁচা কলায় রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন যা শরীরের হাড়কে শক্তিশালী করে।
৫.কাঁচা কলা একটু ভারি জাতীয় খাবার। ফলে ক্ষুধা কম লাগে।
৬.অ্যাসিডিটি কমিয়ে খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে ।
৭.কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

No comments:

Post a Comment