Tuesday, April 27, 2021


মাগফিরাতের দশ দিন
মুমিনের গুণ অর্জনের সময় রমজান

পরম করুণাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর অপার অনুগ্রহে ১৪টি রমজান আমরা পাড়ি দিয়ে এসেছি। আজ ১৫ রমজান। জানি না, মাবুদের রহমতের ছায়ায় কতটা জায়গা করে নিতে পেরেছি। মাগফিরাতের এ সময়েও যদি একনিষ্ঠ সিয়াম সাধনার মাধ্যমে খোদার প্রিয় হতে পারি, তাহলে ধন্য হব আমরা। আল্লাহর ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে তার প্রিয় বান্দা হওয়ার পদ্ধতি পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে: ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তবে আমার নবি (সা.)-কে অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপগুলো মার্জনা করবেন।’ (আল ইমরান : ৩১)। বিশ্বমানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জীবনাদর্শে রয়েছে সমগ্র সৃষ্টি জগতের কল্যাণ ও মুক্তি। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে নবি! আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমত করে পাঠিয়েছি।’ (সুরা আম্বিয়া : ১০৭)। অন্য আয়াতে এসেছে, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহর জীবনের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ; যারা আল্লাহ ও শেষ দিনের আশা রাখে এবং আল্লাহকে বেশি স্মরণ করে।’ (সুরা আহজাব : আয়াত ২১)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার প্রিয় বান্দাদের পরিচয় উল্লেখ করে বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহর প্রকৃত বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের যখন অজ্ঞ লোকে মূর্খতাসুলভ সম্বোধন করে তখনও তারা সালাম ও শান্তির বাণী বলে। তারা রাত্রি যাপন করে তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশে সেজদায় অবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এবং তারা বলে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের থেকে জাহান্নামের শাস্তি বিদূরিত করুন; উহার শাস্তি তো নিশ্চিত বিনাশ! নিশ্চয়ই তা অস্থায়ী ও স্থায়ী আবাস হিসাবে নিকৃষ্ট!’

আর যখন তারা ব্যয় করে তখন অপচয় করে না এবং কার্পণ্যও করে না; বরং তারা মধ্যপন্থায় থাকে। তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোনো ইলাহ বা মাবুদকে ডাকে না। আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না। যারা এসব করে তারা শাস্তি ভোগ করবে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সেখানে তারা হীনাবস্থায় স্থিত হবে। তবে তারা নয়, যারা তওবা করে ইমান আনে ও সৎকর্ম করে। আল্লাহ এদের পাপ পুণ্যের দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন; আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরমদয়ালু।

যারা তওবা করে ও সৎকর্ম করে, তারা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়। আর যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় না এবং অসার ক্রিয়াকলাপের সম্মুখীন হলে স্বীয়মর্যাদার সঙ্গে তা উপেক্ষা করে চলে। আর যারা তাদের প্রতিপালকের নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিলে তার প্রতি অন্ধ ও বধিরের মতো আচরণ করে না এবং যারা প্রার্থনা করে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তানসন্ততি দান করুন যারা আমাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর হবে এবং আমাদের মুত্তাকিদের ইমাম বানিয়ে দিন।’ এদের প্রতিদান হিসাবে দেওয়া হবে জান্নাতের সুউচ্চ স্থান, যেহেতু তারা ছিল ধৈর্যশীল। তাদের সেখানে অভ্যর্থনা জানানো হবে অভিবাদন ও সালাম সম্ভাষণসহ; সেখানে তারা চিরস্থায়ী হবে। আশ্রয়স্থল ও আবাসন হিসাবে তা কতই উৎকৃষ্ট!’ (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৬৩-৭৬)।
এসব আয়াতে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার জন্য মোট ১১টি গুণাবলি বর্ণনা করা হয়েছে: ১. বিনয়, ২. ধৈর্য ও সহনশীলতা, ৩. তাহাজ্জুদ আদায়, ৪. জাহান্নামের ভয় ও তা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা, ৫. অপব্যয় ও কৃপণতা না-করা, ৬. শিরকমুক্ত থাকা, ৭. জেনা ও হত্যার সঙ্গে জড়িত না-হওয়া, ৮. তাওবা করা, ৯. মিথ্যা থেকে বেঁচে থাকা ও অর্থহীন কাজকে এড়িয়ে চলা, ১০. কুরআনের আয়াত অনুধাবন করা ও তা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, ১১. স্ত্রী ও সন্তান যেন আল্লাহর অনুগত হয়-এজন্য তার কাছে প্রার্থনা করা।

আলেমরা বলেন, এ ১১ গুণ রমজানের মাসব্যাপী কর্মশালার সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। এ মাস যেহেতু শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাস, তাই পবিত্র এ মাসে প্রত্যেক রোজাদারকে বর্ণিত গুণাবলির আলোকে আত্মগঠন, আত্মশুদ্ধি ও আত্মোন্নয়নের জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা উচিত।

লেখক : মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী,চেয়ারম্যান নদওয়াতুল ওলামা আল আলামিয়া, মদিনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব, লেখক ও গবেষক l

No comments:

Post a Comment