Monday, April 2, 2018

ব্যাংকে তারল্য আসছে বাড়বে মূল্যস্ফীতি


  


আগে বাধ্যতামূলকভাবে সরকারি আমানতের ৭৫ শতাংশ রাখা হতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। আর ২৫ শতাংশ পেত বেসরকারি ব্যাংক। বেসরকারি ব্যাংকের মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এটিকে এখন ৫০ শতাংশ করা হয়েছে। এতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ আসবে। ফলে তারল্যসংকট অনেকটা কাটবে বলে আশা করা হচ্ছে। এত পরিমাণ টাকা বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কাছে দেওয়ার পরও মূল্যস্ফীতি বাড়বে না বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী। তবে অর্থনীতিবিদরা তার সাথে দ্বিমত হয়ে বলেছেন, এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার অশঙ্কা রয়েছে। ব্যাংকে তারল্যসংকটের কারণে ঋণের সুদহার দুই সংখ্যায় উঠেছে। তাই তারল্য বাড়াতে সরকারি আমানতের ৫০ শতাংশ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকে রাখা নগদ জমা সংরক্ষণ (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর) ১ শতাংশ কমিয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এতে অর্থ প্রবাহ বাড়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতিও বাড়বে। এর প্রভাবে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। ফলে সাধারণ মানুষের ওপর বাড়তি চাপ আসবে। যা নির্বাচনি বছরে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সিদ্ধান্ত সঠিকভাবে নেওয়া হয়নি। এটা মূলত ব্যাংকগুলোকে সুবিধা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। তারল্যসংকট মোকাবিলা ও ঋণের সুদহার কমানোর জন্য এটি করা হলেও বাস্তবে ঋণের সুদ ব্যাংকগুলো কমাবে বলে মনে হয় না। অন্যদিকে, এ সিদ্ধান্তের কারণে বাজারে অতিরিক্ত অর্থ আসায় মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিবিএসের হিসাব অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে অর্থাৎ গত তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৯৩ শতাংশে। যা এর আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৫ দশমিক ৩২ ভাগ। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (প্রথম প্রান্তিক) গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ। এ অবস্থায় টাকার প্রবাহ বাড়ায় মূল্যস্ফীতি হাড় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে। ফলে বেশি সুদে ঋণ নিয়ে, বেশি দামেই পণ্য কিনতে হবে গ্রাহকদের। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত তারল্যসংকট কমাতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে সুবিধা দিলেও তার দাবি অনুযায়ী ঋণের সুদহার এক সংখ্যায় সহসাই নামবে না। অর্থমন্ত্রী চেয়েছিলেন এক মাসের মধ্যেই সুদের হার এক সংখ্যায় নামিয়ে আনতে। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বড়ো বিনিয়োগে অর্থায়ন করছে। এটা ব্যাংকিং নিয়ম অনুযায়ী মোটেই স্বাস্থ্যকর নয় বলেও তিনি বলেন। এ বিষয়ে বিএবি সভাপতি নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, অতি দ্রুত সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নেমে আসবে। তবে এক মাসের মধ্যে এটা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বাস্তবসম্মত কথা বলেননি। সুদের হার কমাতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। তবে এ অর্থ ব্যাংকগুলোর তারল্যসংকট দূর করতে সহায়ক হবে বলেও তিনি বলেছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. ইউনুসুর রহমান বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বেশকিছু দুর্বল দিক রয়েছে। এ ব্যাংকগুলো নিয়ে নানা ধরনের সমালোচনা রয়েছে। এ খাতের ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ প্রতিনিয়তই বাড়ছে। ঋণ দিলে তা আদায় করতে পারে না তারা। ঋণগুলো ঢাকা এবং চট্টগ্রামের কিছু মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে চলে যাচ্ছে। এখান থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বেরিয়ে আসতে হবে।

অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জমান আহমেদ বলেন, ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী বিনিয়োগ বন্ধে দুমাস আগে এডি রেশিও কমানো হয়েছিল। এখন সিআরআর কমিয়ে ব্যাংকগুলোর হাতে অতিরিক্ত তহবিল তুলে দেওয়া হচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলো আবারও আগ্রাসী ব্যাংকিংয়ে মেতে উঠতে পারে। জানা গেছে, ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাড়ে ৬ শতাংশ নগদ জমা রাখতে (সিআরআর) হয়, তা ১ শতাংশ কমানো হয়েছে। এই এক শতাংশ পরিমাণ টাকা ব্যাংকগুলো ব্যবহার করতে পারবে। ফলে ১০ হাজার কোটি টাকার মতো ব্যাংকগুলোর হাতে চলে আসবে। এতে তারল্যসংকট কমে গেলে সুদের হারও কমে আসার কথা। আরো জানা গেছে, সরকারের এ সিদ্ধান্ত কার্যকর থাকবে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে ডিসেম্বরের আগে জুন মাসে তার প্রভাব পর্যালোচনা করা হবে। এ সময়ে যদি আরও কিছু সংযোজন বা বিয়োজন করতে হয় তাও করা হবে।

No comments:

Post a Comment